শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
ডেমরায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় আবর্জনা অপসারণের কতিপয় অসাধু যুবলীগ নেতার সিন্ডিকেট সড়কের ওপরেই ফেলছে গৃহস্থালি বর্জ্য। প্রায় প্রতিটি সড়কই যেন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ডেমরার সাবেক সারুলিয়া ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৪নং ওয়ার্ড এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডটি। এর মধ্যে পড়েছে শুকুরসী জোকা, সান্দিরা জোকা তিতাস কলোনি, সান্দিরা জোকা মৌজার অংশ (পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর ও করিম কলোনি), সারুলিয়া টেংরা (দক্ষিণ, পশ্চিম ও বাহির টেংরা)। এতে ভোটার ২৭ হাজার হলেও ২ লক্ষাধিক মানুষের বাস। সংসদীয় ঢাকা-৫ আসনের ডিএনডির ভেতরের এই এলাকার বাসিন্দাদের নাগরিক দুর্ভোগেরও শেষ নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি নিষ্কাশন খালের পাড় ঘেঁষা ওয়ার্ডের গলাকাটা এলাকায় রানীমহল টু চিটিগাং রোড সড়কের ওপরেই দেদার গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীসহ এলাকাবাসী। ময়লা সিন্ডিকেটের স্বঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী এসব আবর্জনা দ্রুত সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নজরদারি না থাকায় দিনের পর দিন সড়কেই পড়ে থাকে। পাশাপাশি এ ওয়ার্ডে অবস্থিত প্রভাতি, আল আকসা ও মোহাম্মদী স্টিল নামে তিনটি রোলিং মিলের কালো ধোঁয়ার কারণে এখানকার বাতাসই যেন বিষে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলজট, বিদ্যুৎজট, খানাখন্দ ও কাঁচা নিচু সড়ক, অতিরিক্ত মশা-মাছি, বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, নোংরা পরিবেশসহ রয়েছে নানা নাগরিক সমস্যা। এ ছাড়া মাদক-সন্ত্রাস, প্রভাবশালী মহলের অধিপত্য বিস্তার ও আওয়ামী যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নিরপত্তাহীন এখানকার মানুষ।
জানা যায়, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবর্জনা অপসারণে সিটি করপোরেশন থেকে বছরভিত্তিক ইজারা আনে রাসেল বক্স নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির মালিকাধীন মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এলাকার আওয়ামী যুবলীগের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নারী কাউন্সিলর এই বর্জ্য বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ফলে সড়কেই আবর্জনা ফেলে প্রতিনিয়ত পরিবেশ নষ্ট করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কেউ নেই। ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (অঞ্চল-৫ দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চল-৮) সহকারী প্রধান মো. সাহাবুদ্দিন অবশ্য বলেন, ‘বর্তমানে ময়লা অপসারণের গাড়ির সংকট থাকায় কিছুটা সমস্যা হলেও দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে সংশ্লিষ্টরা নিয়মবহির্ভূত কাজ করলে তাদের সতর্ক করা হবে। এমনভাবে বর্জ্য রাখতে হবে যাতে জনসাধারণের কোনো সমস্যা না হয়।’
নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন খোদ ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইব্র্র্রাহিম। তিনি বলেন, ‘এখানে নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে অবৈধ ড্রেজার পাইপ বসিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা আমার কোনো কথা শুনেনি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আমি ডিএসসিসির মেয়র ও স্থানীয় সাংসদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। জড়িতরা তাদের কথাও রাখেনি। এখানে প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি দশায় রয়েছি আমরা। পাশাপাশি আবর্জনা অপসারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো কথা শোনে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু মোবাইল ফোনে বলেন, ‘নগর যুবলীগ নেতারা কিছুদিন আগে শীতলক্ষ্যা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে ডিএসসিসির নিচু অঞ্চলগুলো ভরাট করতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমোদন দেইনি। তাই ড্রেজার চালানোর বিষয়ে আমার দেওয়া কোনো অনুমোদনপত্রও দেখাতে পারবেন না কেউ। আর ড্রেজারের সঙ্গে জড়িতদের নামগুলো আমাকে দিলে আমি ডেমরা থানার ওসির মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’